• ২০ আগস্ট, ২০২৫

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : ছয়দিনেও কমছে না লাশের মিছিল

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : ছয়দিনেও কমছে না লাশের মিছিল

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিশুসহ আরও দুজনের মৃত্যুতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৫।

ঢাকা : রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর ভয়াবহ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। শোকের ছায়া আরও ঘনীভূত করলো আজকের সকাল। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দগ্ধ আরও দুজন, যার মধ্যে একজন শিশু শিক্ষার্থী, না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন।
শনিবার সকালে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জারিফ ফারহান (১৩) ও স্কুলের সহকারী কর্মচারী মাসুমা বেগম (৩৮)। দুজনই ছিলেন মাইলস্টোন পরিবারের সদস্য। একজন ছাত্র, অন্যজন সেবিকা—দুজনেরই জীবনের প্রদীপ নিভে গেল বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে।
জারিফ ফারহান রাজবাড়ীর সন্তান, বড় হচ্ছিল রাজধানীর উত্তরায় মা–বাবার সঙ্গে। ওর শরীরের ৪০ শতাংশ আগুনে ঝলসে গিয়েছিল। নিঃশব্দে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল সে, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
আর মাসুমা বেগম, স্কুলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন। ৯০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে বাঁচার যুদ্ধ করেছিলেন পাঁচ দিন। অবশেষে তিনিও হার মানলেন।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত ১৭ জন মারা গেছেন। আর সামগ্রিকভাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫-এ।
কি ঘটেছিল সেই দিন : গত সোমবার সকালে উত্তরা দিয়াবাড়ির আকাশে হঠাৎ গর্জে উঠে একটি যুদ্ধবিমান। প্রশিক্ষণ চলাকালীন বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে, ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী-কারোই ছিল না রক্ষা।
সামরিক মহল বলছে, এটি ছিল একটি প্রশিক্ষণ বিমান, যার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্ন, এমন জনবহুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেরা এলাকায় যুদ্ধবিমান উড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। শনিবার সকালে আরও দুজনের মৃত্যুর পর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫-এ। এখনো আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অন্তত আরও ১০ জন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে কান্নার রোল থামছে না। সন্তান হারানো বাবা-মা, স্ত্রী হারানো স্বামী কিংবা সহকর্মী হারানোর বেদনায় বিধ্বস্ত অনেকে এখনো হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। একের পর এক মৃত্যু তাদের বুকের পাঁজর ভেঙে দিচ্ছে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এখনো কোনো উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। দায় কার, কে ভাববে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে করণীয় সম্পর্কে?
শিশু জারিফের মতো আর কোনো প্রাণ যেন অকালে ঝরে না পড়ে। মাসুমার মতো কোনো নারীর জীবন যেন আর আগুনে পুড়ে না যায়—এটাই এখন পুরো জাতির চাওয়া। একদিনে দুজনের মৃত্যু নয়, এটি গোটা ব্যবস্থার ব্যর্থতার মৃত্যু।

ঢাকা বাংলা রিপোর্ট

How puzzling all these changes are! I'm never sure what I'm going to turn into a tidy little room.