ঢাকা শহরের উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই অস্থিরতার মূল কারণ হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই।
জানা গেছে, জুলাই আগস্ট মাসে অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন পক্ষের উসকানি ও প্ররোচনায় শিক্ষার্থীরা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। তবে, একাধিক সহিংস ঘটনার পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এদিকে, পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ২০ ও ২১ নভেম্বর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর, ২৪ নভেম্বর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সময়, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে অবরোধ করা হলে পুলিশ বাধা দেয়।
এদিন, পুরান ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
অভিযোগ উঠেছে যে, ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একযোগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে হামলা চালিয়ে মামলা ও ভাঙচুর করেছে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীদের বৈধ আন্দোলনের সাথে ছাত্রদল একাত্ম, কিন্তু অরাজকতা সৃষ্টি হলে তা কখনও মেনে নেয়া হবে না।”
এদিকে, ২৪ নভেম্বর রাতে তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এবং ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঢাকা কলেজ এবং সিটি কলেজের সংঘর্ষ:
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০ নভেম্বরের ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ আতঙ্কিত যে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুনরায় হামলা করতে পারে।
এর আগে, ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। সিটি কলেজের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা আহত হয় এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন যে, তাদের দেড়শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
অভিজিতের মৃত্যু ও ন্যাশনাল মেডিক্যালে হামলা:
২৪ নভেম্বর, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর বিচার দাবিতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে অবরোধ এবং ভাঙচুর ঘটে, যার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
২৫ নভেম্বর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা এবং ভাংচুর চালায় একদল শিক্ষার্থী।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে হামলা:
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে হামলার পর, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। সেসময়, দুই কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থীরা আহত হন। সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুরের ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষাগুলি স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক্যালে সংঘর্ষ:
এছাড়া, ২৪ নভেম্বর তেজগাঁওয়ে বুটেক্স এবং ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিক্ষা উপদেষ্টা ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া:
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা যেন ন্যায্য দাবিগুলি যথাযথভাবে পেশ করেন। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ না হলে সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারত।
এছাড়া, সরকারি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন।
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, তারা ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করবে যারা এসব সংঘর্ষে জড়িত।
শ.হা-২৬-১১-২০২৪