৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশব্যাপী অস্থিরতা শুরু হয়। গণবিস্ফোরণের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ৫৭ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ৬ লাখ গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়।
তিন মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে, ৯৪২টি ব্যক্তিগত অস্ত্রও এখনও থানায় জমা পড়েনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, ৫ আগস্ট গণভবন, সংসদ ভবন ও বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় ভীত সন্ত্রস্ত পুলিশ সদস্যরা থানায় অবস্থান করতে না পেরে আত্মগোপন করেন। এই সুযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন থানা থেকে ৫ হাজার ৭৪৯টি অস্ত্র এবং ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ লুট করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর প্রায় ১৫১২টি অস্ত্র এবং গণভবন ও সংসদ ভবন এলাকা থেকে ৪৮টি অস্ত্র লুট হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, অ্যান্টি ড্রোন গানসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল।
এছাড়া, অনেক সময় উদ্ধার করা অবৈধ ও লাইসেন্সকৃত বেসরকারি অস্ত্রও থানায় মজুত ছিল। সেগুলোও লুট করা হয়। ঘটনা পরবর্তী সময়ে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাইসেন্স করা অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে, এখনো ৯৪২টি অস্ত্র থানায় জমা পড়েনি। এই প্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে অভিযান শুরু হয়। তবে তিন মাসের প্রচেষ্টাতেও এখনো ১ হাজার ৪৩২টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
মিরপুর মডেল থানার ওসি গিয়াস উদ্দিন জানান, তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর থানায় যোগদান করেন। থানা পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে থানার কার্যক্রম চলছে স্টাফ কোয়ার্টারের রুমে। সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অনেক অস্ত্র আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, থানায় যখন যোগদান করি তখন চেয়ার-টেবিল ছাড়া কিছুই ছিল না। থানায় মোট ৭ শতাধিক অস্ত্র মজুত ছিল। যার সবই লুট হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, এসব অস্ত্রের মধ্যে ১২২টি সরকারি অস্ত্র এবং ৩টি বেসরকারি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা এসআই মোজাহিদুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্ট থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এসময় সব অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ১২ ভোল্টের ৮৫টি শটগান, ২০টি চায়না রাইফেল, ২টি এসএমজি, ২টি এলএমজি এবং ৯৪টি পিস্তলসহ জননিরাপত্তায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। তবে থানার অস্ত্রাগারের খাতা পুড়ে যাওয়ায় সঠিক হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. রেজাউল করিম মল্লিক জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ৫ হাজার ৭৪৯টি অস্ত্রের মধ্যে ১ হাজার ৪৩২টি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বাকি অস্ত্রও দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা যাবে বলে আশাবাদি তিনি। ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ লুটের মধ্যে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১৮২টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।