Loading...

  • ০৫ জুলাই, ২০২৫

মা ও দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য

মা ও দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য

কুমিল্লার মুরাদনগরে মা ও দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মামলা হয়নি, নেই কোনো গ্রেপ্তার। ঘটনাস্থলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, চলছে পুলিশি অভিযান।

কুমিল্লা : কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে এক নারী ও তার দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। ঘটনার পর কেটে গেছে ২৪ ঘণ্টা, এখনও মামলা হয়নি, আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি কেউ।

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতরা হলেন খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম (৫৩), ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭), যিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর পরই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন অধিকাংশ পুরুষ। বন্ধ রয়েছে স্থানীয় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এলাকায় এখন বিরাজ করছে আতঙ্ক আর থমথমে পরিবেশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রোকসানার পরিবার মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল। সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ে। চুরির অভিযোগ ওঠে বোরহান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে, যিনি নিহত তাসপিয়ার স্বামীর সহকর্মী এবং কথিতভাবে রোকসানার মাদকের সহযোগী।
ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া ও ব্যবসায়ী বাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে বোরহানকে মারধর করা হয়। রোকসানা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বাধা দিলে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। ঘটনার দিন সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও বাচ্চু মিয়া আবার এলাকায় এলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। একপর্যায়ে রোকসানা বাচ্চুকে চড় মারেন। এরপরই হামলা শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক শ লোকের একটি সংঘবদ্ধ দল রোকসানাদের বাড়ি ঘেরাও করে ভাঙচুর চালায় এবং পরিবারের সদস্যদের উপর নির্মম হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। গুরুতর আহত হন রুমা আক্তার।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কেউ মামলা দায়ের করেনি। নিহতদের পরিবার মামলা করতে কুমিল্লা থেকে এজাহার প্রস্তুত করছে। হামলায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বাছির উদ্দিন। আর তাঁকে ইন্ধন দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও সদস্য বাচ্চু মিয়া। ঘটনার দিন সকালে তাঁরা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল বলেন, তিনি স্থানীয় রাস্তার উন্নয়নকাজ দেখতে গিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছিলেন। এরপর সেখান থেকে চলে আসেন।

তিনি আরও বলেন, রোকসানার পরিবার তিন দশক ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত। তবে তিনি কখনও আইন হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে নন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।