Loading...

  • ২০ আগস্ট, ২০২৫

হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবির পর এবার জাবিতে বিক্ষোভ

হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবির পর এবার জাবিতে বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে নতুন তরঙ্গের ইঙ্গিত। শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিং, গেস্টরুম সংস্কৃতি নির্মূল এবং শান্তিপূর্ণ শিক্ষাজীবন চায়।

ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সরব হওয়ার পর ঢেউ এসে লেগেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শনিবার রাত পৌনে নয়টায় শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়, যা কেবল একটি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে যোগ দিতে আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। পরে তারা উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় উপাচার্যের কাছে তারা ছয় দফা দাবি পেশ করেন—যার মূল বক্তব্য হলো হল রাজনীতি বন্ধ, র‍্যাগিং ও গেস্টরুম সংস্কৃতি নির্মূল, বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ রোধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের সরানো এবং হল প্রশাসনের হাতে সব উপহারসামগ্রী বিতরণের ক্ষমতা।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে স্পষ্ট—তারা ক্যাম্পাস রাজনীতিকে সরাসরি অস্বীকার করছে না, কিন্তু হলে হলে রাজনৈতিক দখল, ভয়ভীতি ও দলীয় আধিপত্য চায় না। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থী শরিফুল আলম বলেন, “আমরা ক্যাম্পাসে রাজনীতির সহাবস্থান চাই, কিন্তু হলে রাজনীতি মানে র‍্যাগিং ও গেস্টরুমের পুনর্জন্ম। সেটা আমরা হতে দেব না।”

প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, উপাচার্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল শিক্ষার্থীদের দাবিকে আলোচনায় নেওয়ার আশ্বাস। আগামীকাল রোববার প্রশাসনিক সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা সতর্ক করে বলেছেন—দাবি মানা না হলে তারা আবার আন্দোলনে নামবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নতুন নয়। তবে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে জাহাঙ্গীরনগরে পৌঁছানো আন্দোলনটি ইঙ্গিত দিচ্ছে একটি বৃহত্তর প্রবণতার—যেখানে প্রজন্ম ‘হল সংস্কৃতিতে দলীয় আধিপত্য’ থেকে মুক্তি চায়। একসময় হলগুলো ছিল রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র; কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা, জবরদস্তি এবং র‍্যাগিংয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিকে আংশিকভাবে মেনে নেয়, তবে তা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির চেহারায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বিষয়টি মেনে নেবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ হলে রাজনীতি বন্ধ মানে দলগুলোর জন্য একটি বড় নিয়ন্ত্রণক্ষেত্র হারানো।

শিক্ষার্থী সমাজ এখন ক্যাম্পাসে রাজনীতির সহাবস্থান চাইলেও হলে শান্তি, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা চাইছে—এটাই আন্দোলনের মূল সুর। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ নিয়ে নতুন বিতর্ক ও সমীকরণ তৈরি হবে।
শ-হা-৯-৮-২০২৫