• ২১ মে, ২০২৫
জুলাই-আগস্টে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন:

জাতিসংঘের তদন্তে শীর্ষ পর্যায়ে জড়িত আ'লীগ সরকার

জাতিসংঘের তদন্তে শীর্ষ পর্যায়ে জড়িত আ'লীগ সরকার

গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র, শ্রমিক ও জনতাকে দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। প্রতিবেদনে বিক্ষোভ দমনকালে হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং সহিংসতার ঘটনায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

ঢাকা : গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল। ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এই সময়ের ঘটনায় সরকারের কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শেষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিস (OHCHR) অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে স্বাধীনভাবে এই তদন্ত করেছে। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনসমূহ তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ এবং সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা, গোয়েন্দা বাহিনী ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সদস্যরা গভীরভাবে জড়িত ছিল।

প্রতিবেদনটি বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ২টা ৩০ মিনিট) জাতিসংঘের জেনেভার প্যালেস দেস নেশনে প্রকাশ করা হয়।

তথ্যানুসন্ধানী দল কী পেয়েছে?

জাতিসংঘের দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুর শহরে সরেজমিন তদন্ত চালিয়ে প্রায় ২৩০ জন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নিয়েছে। তাদের সঙ্গে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলোর মূল নকশা ছিল সরকারের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী, যার মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বিত ভূমিকা ছিল।

পরিকল্পিত সহিংসতা

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের সহিংস শাখাগুলি ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে একযোগে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত ছিল। এছাড়া, ১৮ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক ‘কোর কমিটি’র বৈঠকে বিক্ষোভ দমন করতে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতন

ওএইচসিএইচআর সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই শটগান দিয়ে নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। শিশুদেরও টার্গেট করা হয়েছিল, তাদেরও নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে।

যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভের সময় নারী আন্দোলনকারীরা বিশেষভাবে শিকার হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকি এবং শারীরিক নির্যাতন করেছে।

প্রতিবেদন থেকে সুপারিশ

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিচার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সংস্কারেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পক্ষপাতহীনতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা যায়।

এই তদন্ত প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। 
 

ঢাকা বাংলা রিপোর্ট

How puzzling all these changes are! I'm never sure what I'm going to turn into a tidy little room.