Loading...

  • ২০ মে, ২০২৫

মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি নিশানা করে ডাকাতি

মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি নিশানা করে ডাকাতি

মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি নিশানা করে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি ঘটছে এসব ঘটনা। পুলিশ ১,৪৪৩ ডাকাতের তালিকা তৈরি করে অভিযান চালাচ্ছে এবং প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরে 'হেল্প ডেস্ক' চালু করেছে।

ঢাকা: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি লক্ষ্য করে ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে প্রবাসীদের জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানেও ডাকাতি চলছে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি একাধিক ডাকাতির ঘটনার পর ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ১ হাজার ৪৪৩ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। এ তালিকা ধরে গ্রেপ্তার অভিযানও শুরু হয়েছে।

মহাসড়কে ডাকাতি রোধে পুলিশ ইতিমধ্যে ৭০০ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। এর পাশাপাশি প্রবাসীদের গাড়ি 'টার্গেট' করে মহাসড়কে ঘটে যাওয়া ডাকাতি বন্ধ করতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী 'হেল্প ডেস্ক' চালুর উদ্যোগ নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তারা প্রবাসীদের ভাড়া করা গাড়ির ভিডিও রেকর্ডিং, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চালকের লাইসেন্সের কপি এবং মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

বিমানবন্দর থেকে এক গাড়ির চালক জানান, আবদুল্লাহপুর, হাউস বিল্ডিং, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তবে সবচেয়ে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে কুমিল্লা এলাকায়। সম্প্রতি, তিনি নিজেও প্রবাসী যাত্রীসহ সিলেটের শেরপুরে ডাকাতির শিকার হন। ডাকাত দল তাদের গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেছিল, তবে তিনি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৪টি, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ৭১টি। গত বছরের প্রথম দুই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৬২টি। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পুলিশ ৪ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ বিশেষ করে প্রবাসীরা বাড়ি ফিরার পথে ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। এসব ডাকাতি সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে প্রবাসীদের গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে এবং মেঘনা টোল প্লাজা থেকে তাদের পিছু নেয়।

এছাড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি চালানো হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসেও ডাকাতি হচ্ছে নিয়মিত। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, তিনি মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং যানজটে আটকা পড়লে ডাকাতির আতঙ্কে থাকেন। তিনি অভিযোগ করেন, মহাসড়কে পুলিশি টহল বা তল্লাশি খুব কমই দেখা যায়।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ১ হাজার ৪৪৩ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, বিভিন্ন মহাসড়কের পাশের খাবার দোকানগুলোর মাধ্যমে ডাকাতরা প্রবাসীদের গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে। কিছু চালকও ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি:  
মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি চলছে নিয়মিতভাবে। পুলিশ জানায়, ভুয়া র‍্যাব বা ডিবি পরিচয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের ডাকাতি বেশি হচ্ছে। একাধিক বার এসব ডাকাতির ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা না হয়ে টাকা দিয়ে মীমাংসা হয়ে যায়।

এক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জানান, তার পোশাকভর্তি কাভার্ড ভ্যানে একবার ডাকাতি হয়েছিল, তবে টাকা দিয়ে পোশাক ফেরত পাওয়া যায়।  

হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি: 
হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহাসড়কগুলোতে সকল ধরনের অপরাধ দমনে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এর ফলস্বরূপ ডাকাতির ঘটনা কমে এসেছে।

এছাড়া, পুলিশি নজরদারি আরও কঠোর করা হবে এবং ডাকাতি চক্রের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযান চালানো হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্র : প্রথম আলো।