• ০৫ অক্টোবর, ২০২৫

নেপালে তরুণদের বিক্ষোভ-সহিংসতা

নেপালে তরুণদের বিক্ষোভ-সহিংসতা

“নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে তরুণদের বিক্ষোভ রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। সংঘর্ষে নিহত ১৯, আহত অর্ধশতাধিক।”

ঢাকা : নেপালে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ায় ফুঁসে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম। সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭০ জনের বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করেছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সরকার নতুন নিয়মনীতি না মানায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধের ঘোষণা দেয়। রেডিট, লিংকডইন, পিনটারেস্ট, সিগন্যালও নিষিদ্ধ তালিকায় যায়। তবে নিয়ম মেনে চলায় টিকটকসহ মাত্র পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম চালু রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। ব্যবসা, পর্যটন থেকে শুরু করে প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হয়।

‘নেপো কিড’ ও ‘নেপো বেবিজ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনলাইনে প্রতিবাদ গড়ে ওঠার পর সোমবার সকাল ৯টায় কাঠমান্ডুর মাইতিঘরে কয়েক হাজার তরুণ সমবেত হন। সংগঠন ‘হামি নেপাল’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। ইউনিফর্ম পরে বই হাতে রাজপথে নামে তারা।
প্রথমে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হলে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা হয়। মুহূর্তেই সংঘর্ষে রূপ নেয় পরিস্থিতি।

হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।

সম্প্রতি আদালতের আদেশে সরকার সব সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশ দেয়। সময়সীমা অমান্য করায় ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের দাবি, ভুয়া খবর, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সাইবার অপরাধ ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ।
তবে নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এ নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস একে ‘বিপজ্জনক নজির’ আখ্যা দিয়েছে।

প্রতিবাদকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি বলেছেন, “কিছু মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দেশের স্বাধীনতা বড়।” সমালোচকেরা বলছেন, একসময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সুনাম কুড়ানো নেপাল এখন কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে হাঁটছে।
এর আগে ২০২৩ সালে সাইবার অপরাধের অজুহাতে টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। পরে নিবন্ধন সম্পন্ন হলে আবারও চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।

ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নেপালে এর নিষেধাজ্ঞা তরুণ সমাজকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের এ পদক্ষেপ শুধু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি, বরং গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে শঙ্কা জাগিয়েছে।

ঢাকা বাংলা রিপোর্ট

How puzzling all these changes are! I'm never sure what I'm going to turn into a tidy little room.