• ২০ মে, ২০২৫

বাংলাদেশ আদানির কাছ থেকে পুরো বিদ্যুৎ চেয়েছে

বাংলাদেশ আদানির কাছ থেকে পুরো বিদ্যুৎ চেয়েছে

বাংলাদেশ আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়ে অনুরোধ করেছে। গত তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক হয়ে যাওয়ার পর, আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে পূর্ণ সরবরাহ চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদনটি রয়টার্সের।

গত তিন মাস ধরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে অর্ধেক অংশ প্রদান করে আসছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে, তাই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পূর্ণ পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রে দুটি ইউনিট রয়েছে, প্রতিটির ক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট। গত নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে। এখন বাংলাদেশ দুই ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছে।

বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল, আর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকায় আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। এখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় সরবরাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

২০১৭ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের সময়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০০ কোটি ডলারে নির্মিত এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ২৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ কিনবে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়, এবং পরের ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে।

রয়টার্স জানায়, বাংলাদেশের ডলার সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি, ফলে গত ৩১ অক্টোবর আদানির পক্ষ থেকে একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক হয়ে যায়।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানায়, তারা আদানির কোম্পানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করছে। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, "আমাদের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি।"

তিনি আরও জানান, "বর্তমানে আমরা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করছি, এবং বকেয়া পরিমাণ কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। এখন আদানির সঙ্গে আমাদের কোনো বড় সমস্যা নেই।"

অন্যদিকে, আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র রয়টার্সের অনুরোধের সাড়া দেননি। তবে গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানায়, বিপিডিবির কাছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে।

বিদ্যুতের দাম নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানির বিরোধ রয়েছে। রয়টার্স এর হিসাব অনুযায়ী, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়।

এদিকে, ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের আদালত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই কমিটির প্রতিবেদন এই মাসে প্রকাশ হতে পারে, যার পর চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।

গণমাধ্যমে আসা অন্য একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছর আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে, শেখ হাসিনার সময় স্বাক্ষরিত প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পরীক্ষা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আদানির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আদানি দিল্লি থেকে যে কর–সুবিধা পেয়েছিল, তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। গত ডিসেম্বরে রয়টার্স এই তথ্য প্রকাশ করেছিল।

বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব না দিলেও জানিয়েছেন, তারা চুক্তিটি পর্যালোচনা করছেন এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চলছে।
 

ঢাকা বাংলা রিপোর্ট

How puzzling all these changes are! I'm never sure what I'm going to turn into a tidy little room.