• ২১ মে, ২০২৫

সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ, এরপর কী হবে

সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ, এরপর কী হবে

কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে শনিবার থেকে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর দ্বীপটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মাধ্যমে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয়দের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।

কক্সবাজারের টেকনাফে অবস্থিত প্রবালসমৃদ্ধ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে শনিবার থেকে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে পর্যটকবাহী জাহাজও চলাচল করবে না। পর্যটক যাতায়াত বন্ধ হওয়া নিয়ে নানা আলোচনা চলছে, এবং মানুষের মনে প্রশ্ন উঠে আসছে, আট কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে তখন কী হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এরপর সেন্ট মার্টিনে কেউ যাতায়াত করছেন কিনা তা নজরদারিতে রাখা হবে। তিনি আরও জানান, ২ ফেব্রুয়ারি একটি অনলাইন মিটিং ডাকা হয়েছে, যেখানে সেন্ট মার্টিনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এছাড়া, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, পর্যটক যাতায়াত বন্ধের সময় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর একটি মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করবে। এই কর্মসূচির আওতায় দ্বীপটির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, খাওয়ার পানি উৎপাদন এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয়দের সচেতন করা হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী এই কর্মসূচি শুরু হবে। স্থানীয়দের বিকল্প জীবিকা খুঁজে দেওয়া হবে, যারা পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গত দুই মাসে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। তারা অনলাইনে নিবন্ধন করার পর ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্ট মার্টিনে প্রবেশ করেছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দ্বীপে দুই হাজার পর্যটক পর্যন্ত রাত কাটাতে পেরেছিলেন, তবে নভেম্বরের পরবর্তী মাসগুলোতে পর্যটকদের দিনই ফিরে আসার শর্ত ছিল।

এখন সেন্ট মার্টিনে পর্যটক না আসলে লাভ ও ক্ষতির বিষয়েও আলোচনা চলছে। দ্বীপের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটন বন্ধ হলে তাঁদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে।

সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ১৯৯৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছিল এবং ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরের ১,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার আগে দ্বীপের বাসিন্দা, নাগরিক সমাজ এবং পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। দ্বীপে অনেক অবৈধ হোটেল, রিসোর্ট এবং স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পর্যটকদের উপস্থিতি কমানোর ফলে দ্বীপের পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, যেমন সমুদ্রের প্রবাল আহরণ বন্ধ হয়েছে এবং মা কাছিমের ডিম পাড়ার পরিবেশ রক্ষা হয়েছে।

এই উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপের পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি ঘটবে, এমনটি আশা করা হচ্ছে।

 

ঢাকা বাংলা রিপোর্ট

How puzzling all these changes are! I'm never sure what I'm going to turn into a tidy little room.