আগে দিত ১ লাখ, এখন ৫ লাখ!

ঢাকা: দেশজুড়ে নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতি আর অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "যেখানে আগে ব্যবসায়ীকে দিতে হতো এক লাখ টাকা ঘুষ, এখন সেখানে দিতে হচ্ছে পাঁচ লাখ!"

শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিলো ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা নতুন বই ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা : যাপিত জীবনের আলেখ্য’-এর মোড়ক উন্মোচন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক নিজেই। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মির্জা ফখরুল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এ দেশে এখন কোনো সুশাসন নেই, নেই প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও। পুলিশের চেহারায় কোনো বদল আসেনি। দুর্নীতি এখন আকাশচুম্বী। ঘুষের হারে উন্নয়ন হলেও, নৈতিকতার দিক থেকে দেশ নিচের দিকেই যাচ্ছে।”

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “রাতারাতি কোনো সংস্কার সম্ভব নয়, তবে গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকাও চলবে না। আমাদের এখনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে হবে, জনমানুষের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রে চলে না। আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর, যেখানে জনগণই হবে কেন্দ্রবিন্দু।”

মীর্জা ফখরুল বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ট্যারিফ নীতি ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতিকে বড় ধরনের বিপদের মুখে ফেলতে পারে। এখন সময়-দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলো যেন একে অপরকে ঘায়েল না করে বরং একসঙ্গে কাজ করে। জনগণের কল্যাণেই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য থাকা উচিত।”

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারি পর্যায়ে ঘুষের হারে যে হারে ‘মূল্যস্ফীতি’ হয়েছে, তা অভূতপূর্ব। শুধু ব্যবসায়ী নয়—জমির দলিল, পুলিশি প্রতিবেদন, চিকিৎসা ছাড়পত্র—সব জায়গায় ঘুষের হার ৪-৫ গুণ বেড়ে গেছে।

বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দেশের নাগরিকরা এক ধরনের নীরব আতঙ্কে ভুগছে। মানুষ কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। অথচ দেশের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য দরকার ছিল সুশাসন, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা।

মির্জা ফখরুলের কথায় উঠে এসেছে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত বাস্তবতা। ঘুষের হার পাঁচগুণ হওয়া শুধু অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়-এটা নৈতিক বিপর্যয়ের আলামত। যেখানে দেশের সবচেয়ে দুর্বল মানুষটিও সুবিচারের আশায় ঘুষ দিতে বাধ্য হয়, সে দেশ কখনোই টেকসই উন্নয়নের পথ ধরে এগোতে পারে না।