• ২০ মে, ২০২৫

বেতন-বোনাসের চাপে শিল্পক্ষেত্র আরও সংকটগ্রস্ত

বেতন-বোনাসের চাপে শিল্পক্ষেত্র আরও সংকটগ্রস্ত

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের চাপ বেড়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অধিকাংশ শিল্প-কারখানা সংকটে পড়েছে, যার ফলে উৎপাদন কমেছে এবং শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও, অন্যান্য খাত যেমন পাট ও বস্ত্রের উদ্যোক্তারা আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। বিকেএমইএ সরকার থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার সহায়তা চেয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সহায়তা চেয়েছে, অন্যথা

ঢাকা: আর কিছু দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে, এ সময়ে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোর বেতন ও বোনাস পরিশোধে শিল্প মালিকদের মাথাব্যথা বেড়ে গেছে। শিল্প-কারখানাগুলোর সক্ষমতা যদি না থাকে, তাও এই সময়ে কর্মীদের বেতন-বোনাস দিতে বাধ্য হন মালিকরা। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তনের পর থেকে দেশের অধিকাংশ শিল্প-কারখানা নাজুক অবস্থায় পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর, বকেয়া বেতন, ভাতা ও বোনাসসহ নানা দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এর ফলশ্রুতিতে অনেক কারখানার উৎপাদন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। পাশাপাশি বড় বড় সরকারি প্রকল্প স্থবির হয়ে সরকারি ব্যয়ও কমে গেছে। ফলে, নির্মাণসহ অন্যান্য সংযুক্ত শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে, শিল্প-কারখানার উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়ায় মালিকরা বিপাকে পড়েছেন।

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে, মালিকরা কর্মীদের মজুরি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে, দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয় খাত তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও, কম দামে কার্যাদেশ গ্রহণ, কারখানায় জ্বালানির সংকট এবং কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকটে তারা চাপের মধ্যে আছেন। সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বড় অঙ্ক এখনও আটকে রয়েছে।

এদিকে, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাস ও অন্যান্য পাওনা আগামী ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করবে। এসব সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ছুটিসংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৮৫তম বৈঠকে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) সরকারকে ১৫ রমজানের মধ্যে সাত হাজার কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে। সংগঠনটির দাবি, এই সহায়তা না পেলে ঈদুল ফিতরের আগে পোশাক খাত বেতন-বোনাস পরিশোধে বিপদে পড়তে পারে।

সম্প্রতি বিকেএমইএ অর্থ সহায়তাসংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে একটি কঠিন সময় পার করছে এবং তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। এর ফলে, কার্যাদেশ বাড়লেও অনেক কারখানায় নগদ অর্থের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া, সামনে ঈদের বেতন ও বোনাসের চাপও রয়েছে। এই অবস্থায়, শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী জানিয়েছেন, পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী খাতও ভালো অবস্থায় নেই। বৈশ্বিক ক্রেতাদের আগ্রহের অভাব এবং কার্যাদেশ কমে যাওয়ার কারণে খাতটির প্রায় দুই লাখ শ্রমিকের নিয়মিত মজুরি পরিশোধে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এদিকে, বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা গ্যাস সংকটের কারণে সমস্যায় পড়েছেন। সম্প্রতি গ্যাস সরবরাহের দাম বাড়ানো হলেও, তা যথাযথভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বিটিএমএ (বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন) পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, ভারতের আগ্রাসী নীতি এবং সুতা অ্যান্টি-ডাম্পিং কার্যক্রমের ফলে, স্থানীয় বাজারে প্রায় দেড়শ কোটি ডলারের পণ্য অবিক্রীত থাকবে। এ ছাড়া, গত এক বছরে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য কম বিক্রি হয়েছে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, দেশের শিল্প মালিকরা সরকারের কাছে সহায়তা ও পরিস্থিতি সামলানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।

ঢাকা বাংলা রিপোর্ট

How puzzling all these changes are! I'm never sure what I'm going to turn into a tidy little room.