Loading...

  • ২১ মে, ২০২৫

বগুড়া পুলিশ লাইনে আয়নাঘর: গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

বগুড়া পুলিশ লাইনে আয়নাঘর: গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

বগুড়া পুলিশ লাইনের আয়নাঘরে গুম ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের শিকার করা হয়েছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে। গুম কমিশনে অভিযোগ এবং তদন্ত চলছে।

ঢাকা: বগুড়া পুলিশ লাইনের গোপন বন্দিশালায় (আয়নাঘর) নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। শুরুতে সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশের সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে যেতেন এবং পরে গুম করে রাখতেন। এই গুমের ঘটনাগুলোর শিকার শুধু সাধারণ মানুষ নয়, পুলিশ কর্মকর্তার সন্তানরাও।

আয়নাঘরে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো ভুয়া জঙ্গি মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে নির্যাতনের পর তাদের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হিসেবে দেখানো হতো। এমন ঘটনা নিয়ে গুম কমিশনে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।  

বগুড়া ও আশপাশের অঞ্চলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল নামটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্থানীয়রা জানতেন, আয়নাঘরের ভয়াবহতা, তবে সন্ত্রস্ত হয়ে কেউ মুখ খোলেনি। অভিযোগ রয়েছে যে, গুমের এই কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন বগুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল এবং আব্দুল জলিল। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতেন বগুড়া ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর আমিরুল, ইমরান মাহমুদ তুহিন, এসআই জুলহাস, মুজিবর, আলমগীর, এএসআই রাশেদ, কনস্টেবল গোবিন্দসহ আরো অনেক সদস্য।  

এছাড়া, গুম হওয়া অনেককেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলোচিত ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ মামলায় আসামি করা হয়, যদিও তাদের দাবি ছিল, তারা ঘটনার সময় কিছুই জানতেন না।  

২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল, হাফিজুর রহমান হাফিজ নামে এক ব্যক্তি ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সাদা পোশাক পরিহিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা তুলে নেওয়া হয় এবং পরে তাকে বগুড়া পুলিশ লাইনের আয়নাঘরে গুম করা হয়। সেখানে তাকে অপারেশন ঈগল হান্টের মামলায় ফাঁসানোর জন্য তিন মাস ধরে নির্যাতন চালানো হয়।  

আরেক ভুক্তভোগী আল-আমিন, যিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার রহমতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, অভিযোগ করেছেন যে, তাকে গুম করার সময় বগুড়া পুলিশ লাইনের আয়নাঘরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফ মণ্ডল এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

এদিকে, নির্যাতিতরা আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন এবং গুম কমিশনে তদন্ত চলছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বগুড়া পুলিশ লাইনের গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। যদিও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে এটি এখনও গভীর তদন্তের মধ্যে রয়েছে।  

তদন্ত প্রক্রিয়া:
গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন জানিয়েছেন, বগুড়া পুলিশ লাইনের গোপন বন্দিশালার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন তারা। তবে তদন্তাধীন বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।